শিক্ষক কি? শিক্ষক এর পূর্ণরুপ হলো শিষ্টাচার, ক্ষমাশীল এবং কর্তব্যপরায়ন। শিক্ষকতা পেশা একটি মহান পেশা। এটি একটি সেবামূলক পেশা এ ব্যাপারে কারো কোনো সন্দেহ থাকার কথা নয়। সকল ধর্মের ধর্মীয় দিক থেকেও এ পেশা, সব পেশার শীর্ষে। বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় শিক্ষকতা পেশাটি আর্থিক থেকে অত সুবিধাজনক অবস্থানে না থাকলেও, এই পেশাটি একসময় অতি সম্মানের পেশা ছিল।
আদর্শ শিক্ষকের কর্তব্যঃ আপনি যদি একজন আদর্শ শিক্ষক হন, তবে অবশ্যই আপনার ধ্যান-ধারণা শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক ও বিদ্যালয়কেন্দ্রিক হতে হবে। বিভিন্ন পরিবার থেকে আসা সকল শিশুকে মনে করতে হবে এসকল শিশু আমার। সবচেয়ে বড় কথা হলো এ পেশাকে চাকুরী হিসেবে গ্রহন না করে, এক আদর্শ সেবামূলক পেশা হিসেবে মেনে কাজ করলে আপনি নিজে সহ সমাজের সকলেই উপকৃত হবে বলে আমার দৃঢ় বিশ^াস।
একজন আদর্শ শিক্ষকের কর্তব্য হলোঃ
১. সময়মত আগমন ও প্রস্থান।
২. সুনির্দিষ্ট পাঠ-পরিকল্পনার মাধ্যমে পাঠদানের প্রস্তুতি গ্রহণ।
৩. শ্রেণি ব্যবস্থাপনা করা।
৪. বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে ব্ল্যাকবোর্ড ও শিক্ষকের আই-কন্ট্যাক্ট করা যায় এরূপ স্থানে বসার ব্যবস্থা করা।
৫. প্রতিটি শিক্ষার্থীর প্রতি সমহারে সুনজরের মাধ্যমে হাসিমুখে কথা বলা।
৬. কুশলাদি বিনিময় করা।
৭. পাঠ সংশ্লিষ্ট উপকরণ ব্যবহার করা। ( উপকরণের ক্ষেত্রে সহজলভ্য, সস্তা, বাস্তব এবং টেকসই এর দিক বিবেচনা করা)
৮. শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে উত্তর বের করে সৃজনশীলতার বিকাশ সাধন করা।
৯. পাঠটি যাতে আনন্দদায়ক হয় সেব্যাপারে সক্রিয় থাকা।
১০. সকল শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ করার জন্য দলীয়কাজ, জোড়ায় কাজ, একক কাজ, প্রশ্নোত্তর, গল্প বলা ও শোনা ইত্যাদি পদ্ধতি ব্যবহার করা।
১১. পাঠ চলাকালীন সময়ে শিখনফল বাস্তবায়ন করা।
১২. পাঠ চলাকালীন সময়ে ধারাবাহিক মূল্যায়নের ব্যবস্থা করা।
১৩. পারগ ও অপারগ শিক্ষার্থী নির্ণয় করে, অপারগ শিক্ষার্থীদের প্রতি বিশেষ ব্যবস্থা করা।
১৪. বিদ্যালয়ের নির্ধারিত সময়ের বাইরে অতিরিক্ত সময়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা।
১৫. শিক্ষার্থীদের সহপাঠ্যক্রমিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করানো।
১৬. শিক্ষার্থীদের পরিষ্কার-পরিছন্নতার অভ্যাস গড়া ও স্মার্ট নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করা।
১৭. শ্রেণি পাঠদানের পাশাপাশি বিদ্যালয়ের ভৌত অবকাঠামোর প্রতি যতœশীল হওয়া।
শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে একজন প্রাথমিক শিক্ষক যেসব প্রতিবন্ধকতার শিকার হনঃ
১. ভাক্সগা পরিবার।
২. অর্ধভাঙ্গা পরিবার।
৩. ঝগড়াটে পরিবার।
৪. পারিবারিক দ্ব›দ্ব ও কলহপূর্ণ পরিবার।
৫. যৌথ পরিবার।
৬. অসচ্ছল পরিবার।
৭. দরিদ্র পরিবার।
৮. সামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবার।
৯. অসচেতন পরিবার।
১০. ভৌগলিক দিক থেকে অবস্থানগত পরিবার।
১১. পিতা-মাতা উভয়ই চাকুরীজিবী পরিবার।
উত্তরণের উপায়ঃ উপরোক্ত প্রতিবন্ধকতা সমূহ প্রাথমিক শিক্ষাসহ সকল স্তরের শিক্ষায় অন্তরায় হিসেবে কাজ করে। বিশেষ করে প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে চরম সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। উপরোক্ত প্রতিবন্ধকতা বা সমস্যা দূরীকরণে শুধুমাত্র শিক্ষক দ্বারা সম্ভব নয়। এ জন্য সরকারের যথেষ্ট সহযোগিতা ও ভূমিকা থাকা প্রয়োজন।
তবে এক্ষেত্রে আমার মতে একজন শিক্ষকের ভূমিকা হলোঃ
উপরোক্ত প্রথমে উল্যেখিত ১৭ (সতের) টি কর্তব্য পালনসহ যথাযথভাবে নিয়মিত হোম ভিজিট করা, অভিভাবক সমাবেশ করে শিক্ষার সুফল সম্পর্কে অভিভাবকদের ধারণা প্রদান। স্থানীয় গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গের নিয়ে সামাজিক সচেতনতা সভা করা। ব্যাক্তিগত উদ্যোগে বা প্রয়োজনে ¯^চ্ছল ব্যাক্তিদের নিকট আর্থিক সহযোগিতা নিয়ে দরিদ্র ও অ¯^চ্ছল শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপোকরণ দিয়ে সহযোগিতা করা। এছাড়াও প্রয়োজনে উর্ধ¦তনকর্তৃপক্ষ ও জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় বিদ্যালয়ের যাতায়াত ব্যবস্থা সহজিকরণ, যতদূর সম্ভব পারিবারিক দ্ব›দ্ব বিবাদ মিটানো, সামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবারদের এগিয়ে নিয়ে আসার ব্যবস্থা সহ সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
রচনায়ঃ মোঃ আব্দুর রকিব, সহকারী শিক্ষক, ছত্রাজিতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শিবগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।