চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধিঃ চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায় ফুটবলে খেলায় দিনদিন আগ্রহ বাড়ছে নারীদের। উপজেলার কানসাট ইউনিয়নে পুকুরিয়া গ্রামের একদল মেয়ে স্থানীয় একটি ক্রিড়া একাডেমির হয়ে প্রতিদিন ফুটবল খেলা অনুশীলন করছে। ওই মেয়েরা কানসাট সোলেমান ডিগ্রি কলেজের মাঠে খেলাধুলা চর্চা করেন।
ওই ফুটবল কন্যাদের দাবি; পারিবারিক দরিদ্রতা আর সামাজিক কুসংস্কারের শেকল ছিঁড়ে তারা এগিয়ে যেতে চায় বহুদূর। এ লক্ষে নিত্যদিন চলছে কঠোর অনুশীলন।
জানা গেছে; ফুটবল খেলায় আগ্রহ নারীরা শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার ক্রীড়া একাডেমির শিক্ষার্থী হয়ে নিয়মিত ফুটবল অনুশীলন করছেন। এ প্রতিষ্ঠানটি ২০২১ সালের ০২ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে ৭৫ জন এ ক্লাবটিতে প্রশিক্ষণার্থী আছে। এর মধ্যে মেয়ে ২৮ জন। তারা নিয়মিত অনুশীলন ফুটবল করছে।
ত্রীশনা নামের এক নারী বলেন; ‘ মেয়েদের ফুটবল খেলতে দেখলে এলাকায় কানাঘুষা করে। মানুষ অনেক কটু কথা বলে। আমরা নিন্দুকদের কথাকে উপেক্ষা না করে নিজ গতিতে এগিয়ে যেতে চাই বহুদুর। স্বপ্নের ক্যারিয়ার গড়তে চাই ফুটবল খেলায়। আমরা প্রতিদিন অনুশীলন করি, একদিন দেশের হয়ে সুনাম বয়ে আনব বলে।’
অনামিকা নামের আরেক নারী বলেন; ‘ কত মানুষ কত কথা বলে আমরা তাও হাল ছাড়িনি। আমরা আমাদের অনুশীলনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা দেখিয়ে দিতে চাই, আমরা নারীরাও সব পারি।’
ফুটবল খেলোয়াড় নারীদের অভিভাবকরাও তাদের জন্য যে কোন ত্যাগ স্বিকার করতে রাজি। তাদের মেয়েদর ফুটবেলায় কোন বাঁধা দিবেন না অভিভাবকরা।
বাচ্চু হলদার নামের এক নারী ফুটবলারের পিতা বলেন; ‘ আমাদের মেয়েরা দেশের হয়ে বিদেশের মাটিতে খেলবে। আমরা খুব খুশি হবো। তাদের জন্য আমরা যেকোন ত্যাগ স্বিকার করতে রাজি।’
আরেক মেয়ের পিতা লিথু হলদার বলেন; ‘ আমরা ৩ মেয়ে। তারা সবাই এ ক্লাবের হয়ে নিয়মিত এ মাঠে খেলাধুলা করছেন। আমি খুবই আনন্দিত যে আমার মেয়েরা তাদের ক্যারিয়ার গড়বে ফুটবল খেলে। বিদেশের মাটিতে ফুটবল খেলায় অংশ নিয়ে নিজ দেশের মান রক্ষা করবে।’
প্রায় ১১ মাসের মাথায় শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার ক্রীড়া একাডেমির ক্ষুদে নারী ফুটবলাররা স্থানীয় অনেক টুর্নামেন্টে অংশ নিয়ে নিজেদের প্রতিভার জানান দিচ্ছে।
ক্রীড়া একাডেমির কোচ সেতাউর রহমান বলেন; ‘নিয়মিত অনুশীলন এবং বিভিন্ন টুর্নামেন্টে অংশ নিয়ে নিজেদের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হয়েছে। অনুর্ধ-১৫ জাতীয় পর্যায়ে ট্রাইলে আমাদের ক্লাবের ঝিনুক ও অনামিকা অংশগ্রহন করে। এছাড়াও আমার পরিচর্যায় গড়ে উঠা বিকেএসপিতে প্রশিক্ষণরত অবস্থায় কবিতা নামের এক মেয়ে অনুর্ধ-১৫ তে জাতীয় পর্যায়ে খেলার সুযোগ পেয়েছে। ইতোপূর্বে আমাদের ক্লাবের খেলোয়াড় মুন্নি, সোহাগী কিসকু, সাগরিকা, স্বপ্নাসহ আরও কয়েকজন মেয়ে জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পেয়েছে।’
ক্লাবটির কোচ সেতাউর রহমান আরও বলেন; ‘ আমাদের এ ক্লাবে অনেক মেয়ে আছে নিজেও ডে-লেভারের কাজ করে নিজে খেলতে আসে। এখান কার মেয়েদের স্বপ্ন একটায় নিজের দেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন। ক্লাবটি সরকারী অনুদান পেলে আরও আগিয়ে যাবে।’
সামাজিক আর অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতা থাকলেও মেয়েদের সামনে এগিয়ে যাবার স্বপ্ন দেখাতে চান ওই ক্রীড়া একাডেমির সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম আলী হায়দার সেলিম। তিনি বলেন; ‘ আমাদের যা আছে সব টুকু দিয়ে চেষ্টা করব এসব মেয়েদের ভালো কিছু শিখানোর।’
বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার ক্রীড়া একাডেমির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ডা. তড়িৎ কুমার সাহা। তিনি বলেন; ‘একাডেমির ছাত্রীদের পড়ালেখার জন্য হোম টিচার রেখে তাদের প্রাইভেট পড়ানো হয়। ডাক্তারী চিকিৎসা ঔষধ সম্পূর্ণ ফ্রিতে দেওয়া হয়।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ক্রীড়া অফিসার জাহাঙ্গীর আলম বলেন; ‘মাত্র কয়েক মাস আগে প্রতিষ্ঠিত একাডেমিটি যেভাবে এগিয়েছে তা খুব প্রশংসনীয়। ওই ক্লাবটিকে সব ধরণের সহায়তা করা হবে। এছড়াও ছেলে মেয়েদের খেলাধুলার প্রতি আগ্রহী করতে অভিভাবকদেরও কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে।